৯ম শ্রেণির ছাত্র সুমন। সে ক্লাসে অমনোযোগী। মা-বাবার চাইতে বন্ধুদের কথার গুরুত্ব দেয় বেশি ৷ মা কিছু বললে সে ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করে।
১৮ বছরের মেয়ে রিদিতা। মা-বাবার একমাত্র সন্তান রিদিতা, মেধাবী ও প্রতিভাবান। মা-বাবা থেকে শুরু করে আত্মীয়স্বজন সবাই রিদিতার বড় ধরনের সফলতা আশা করে। বাবা-মা তাদের একমাত্র সন্তানের সকল চাহিদা পূরণ করেন, শ্রেষ্ঠ হওয়ার সব রকম সুযোগ তৈরি করে দেন তারা। রিদিতা এখন প্রচণ্ড দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। মা-বাবার স্বপ্ন সে কি পূরণ করতে পারবে? সে কি পারবে সামনের ভর্তি পরীক্ষায় সফলতা আনতে? কিছুই ভালো লাগে না তার। অল্পতেই রেগে যায়, অল্পতেই তার ক্লান্তি আসে। ইদানীং রাতের বেলায়ও ঘুম আসতে চায় না। প্রচণ্ড মাথা ব্যথায় সে ছটফট করে।
উপরের ঘটনাটিতে একটি কিশোরী মেয়ের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কথা বলা হয়েছে। এ ধরনের সমস্যাগুলোর মধ্য দিয়ে কৈশোরের মনোসামাজিক সমস্যার চিত্র ফুটে উঠেছে। তোমরা কি জানো মনোসামাজিক সমস্যা অর্থ কী? এসো আমরা বিস্তারিতভাবে এ সমস্যা সম্পর্কে জেনে নেই ।
বেশির ভাগ কিশোর-কিশোরীরা বড় ধরনের সমস্যা ছাড়াই বয়ঃসন্ধিক্ষণ বয়স পার করে দেয়। কিন্তু কেউ কেউ আছে যারা সাংঘাতিকভাবে তাদের জীবনকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং তাদের সমস্যা তাদের পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী, সহপাঠী সবার জন্যই সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এগুলো পরোক্ষভাবে সমাজের সবাকেই প্রভাবিত করে। এ সমস্যাগুলোই মনোসামাজিক সমস্যা। কৈশোরের মনোসামাজিক সমস্যার মধ্যে পড়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ প্রবণতা, মাদকাসক্তি, বিষণ্ণতা, স্কুল পলায়ন ইত্যাদি। যে ছাত্রটি স্কুল ফাইনাল পরীক্ষার আগেই স্কুল ত্যাগ করে, সে শুধু নিজের ভবিষ্যতই নষ্ট করে না, সমাজের জন্যও সে বোঝা হয়ে দাঁড়ায় ৷
কৈশোরের মনোসামাজিক সমস্যা দুই ধরনের হয়। একটি অন্তর্মুখী ও অপরটি বর্হিমুখী। অন্তর্মুখী সমস্যায় সমস্যাগ্রস্ত ছেলেমেয়েরা নানা ধরনের মানসিক ও আবেগীয় জটিলতায় ভোগে। যেমন- হতাশা, উদ্বেগ ইত্যাদি। বাইরে থেকে এ ধরনের সমস্যার প্রকাশ কম থাকে অর্থাৎ তাদের দেখে হয়তো মনে হবে, সে খুবই স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। কিন্তু ভিতরে ভিতরে সে খুব যন্ত্রণায় ভুগছে। আবেগীয় এসব সমস্যা পরবর্তীতে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার উদ্ভব ঘটায়। যেমন- হতাশা ও বিষণ্ণতা থেকে খাদ্যে অনীহা, ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
বহির্মুখী সমস্যার ক্ষেত্রে সমস্যাগ্রস্ত ছেলেমেয়েদের সমস্যা তার আচরণে প্রকাশ পায়। বহির্মুখী মনোসামাজিক সমস্যা হলো মাদকাসক্তি, বিভিন্ন ধরনের অপরাধ প্রবণতা ইত্যাদি। সাধারণত পারিবারিক বন্ধনের অভাব বা পরিবারের অতিরিক্ত প্রশ্রয় বহির্মুখী সমস্যার উদ্ভব ঘটায়। অপর দিকে মা-বাবার অতিরক্ষণশীলতা অন্তর্মুখী সমস্যার প্রধান কারণ হিসাবে চিহ্নিত। সব কিছুতেই শাসন, সন্তানকে সব সময় চোখে চোখে রাখা অতিরক্ষণশীল মা-বাবার বৈশিষ্ট্য। বহির্মুখী ও অন্তর্মুখী উভয় ধরনের সমস্যা একটির সাথে অন্যটি সম্পর্কিত। যেমন- অনেকে অপরাধপ্রবণ বিষণ্নতায় ভোগে, আবার হতাশাগ্রস্থ কিশোর মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।
কিশোর অপরাধ-
মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হলো কৈশোরকাল। এ সময়ে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন খুব দ্রুত হয়। কৈশোরের একটি ছেলে বা মেয়েকে এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে হয়। কৈশোরকাল প্রাপ্ত বয়সে যাওয়ার সময়কাল। সাধারণত ১১ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত কৈশোরকাল ।
কৈশোরকালে কোনো ছেলে বা মেয়ে আইনবিরোধী কাজে লিপ্ত হলে তাদেরকে কিশোর অপরাধী বলা হয়। বাংলাদেশ শিশু আইন ১৯৭৪ অনুসারে কিশোর অপরাধীর ক্ষেত্রে ছেলেদের ৮ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে এবং মেয়েদের ১৮ বছরের মধ্যে কেউ সমাজবিরোধী কাজ করলে তাকে সংশোধনের জন্য বিশেষ বিচারের সামনে হাজির হতে হয়। কিশোর অপরাধ হলো অপরিণত বয়সে প্রচলিত সমাজব্যবস্থা, আইনকানুনবিরোধী আচরণ। প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য যে ধরনের কাজ শাস্তিযোগ্য অপরাধ, সে ধরনের কাজ ১৬ বছরের নিচে ছেলেরা এবং ১৮ বছরের নিচে মেয়েরা সংঘটিত করলেই তা কিশোর অপরাধ। কিশোর অপরাধ প্রমাণিত হলে শাস্তির ব্যবস্থা থাকে না। তাদের আচরণ সংশোধনের জন্য সংশোধনী কেন্দ্রে রাখা হয়।
বয়স্কদের অপরাধ যেমন পরিকল্পিত থাকে কিশোরদের অপরাধ থাকে অপরিকল্পিত এবং সংখ্যায় অনেক বেশি। কিশোর অপরাধের যে ধরনগুলো আমাদের দেশে বেশি দেখা যায় তা হলো- স্কুল পলায়ন, মেয়েদের প্রতি অশোভন আচরণ, চুরি, ছিনতাই, খুন, ডাকাতি, মারামারি, মাদকদ্রব্য সেবন ইত্যাদি।
মনোস্তাত্ত্বিকেরা কিছুটা ভিন্নভাবে কিশোর অপরাধীদের চিহ্নিত করেন। যেকোনো অগ্রহণযোগ্য কাজ তা আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ না হলেও তা কিশোর অপরাধের মধ্যে পড়ে। যেমন- কারও জিনিস অন্যায়ভাবে নিজের দখলে রাখা, অন্যের সম্পত্তির ক্ষতি করা, অন্যের জীবনের জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা ইত্যাদি। এটা হতে পারে কোনো গাড়িকে ঢিল মেরে পালিয়ে যাওয়া, বিনা কারণে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, শুধু মজা করার জন্য কোনো ক্ষতি করা, যে কোনো ধরনের অন্যায় আচরণ করাই কিশোর অপরাধের মধ্যে পড়ে।
অনেকে বয়ঃসন্ধি বয়সের আগে থেকেই অপরাধমূলক কাজ করে থাকে। তারা সাধারণত ৭/৮ বছর বয়স থেকে ধারাবাহিকভাবে অপরাধ করে। যেমন- মারামারি করা, অন্যের জিনিস নষ্ট করা, চুরি করা ইত্যাদি। এ ধরনের অপরাধের কারণ হিসেবে মানসিক সমস্যা বা বিপর্যয়কে দায়ী করা হয়। কিশোর অপরাধের উপর দীর্ঘদিনের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, যারা ছোট বেলা থেকে অপরাধমূলক কাজে অভ্যস্ত থাকে তারা বড় হয়েও অপরাধমূলক কাজ করে থাকে। তাদের সম্পর্কে গবেষকদের আরও অভিমত -
যারা কৈশোরের আগে থেকে অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত তাদের ছোটবেলা থেকেই কিছু লক্ষণ থাকে। তারা সমবয়সীদের তুলনায় স্কুলে অমনোযোগী থাকে, তাদের বুদ্ধাংক বা আই কিউ কম থাকে, তাদের সমবয়সীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে না। এসব লক্ষণ একটি ছোট শিশুর কিশোর অপরাধী হওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়৷
আরেক ধরনের অপরাধী আছে যারা কিশোর বয়সে এসে অপরাধ জগতে প্রবেশ করে। তারা সমবয়সী দলের চাপে পড়ে অপরাধী হয়। এদের অপরাধ প্রবণতা ততটা গুরুতর হয় না। এরা সমবয়সীদের সাথে দলে অপরাধমূলক কাজ করে ৷
এদের সম্পর্কে গবেষণার ফলাফল হলো—
যে কোনো সমস্যা প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। কোনো সমস্যা তৈরি হওয়ার পর সমাধান করা হলো প্রতিকার করা। সমস্যাটির যেন উদ্ভব না হয় তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ হলো প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
আমাদের দেশে কিশোর অপরাধ প্রতিকারে অপরাধী কিশোর কিশোরীদের জন্য সংশোধনী প্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। অপরাধীকে ওই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সংশোধনী প্রতিষ্ঠানে রাখা হয়। সংশোধনী প্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকে। যেমন— সেলাই ১৮ বছরের মেয়ে রিদিতা। মা-বাবার একমাত্র সন্তান রিদিতা, মেধাবী ও প্রতিভাবান। মা-বাবা থেকে শুরু করে আত্মীয়স্বজন সবাই রিদিতার বড় ধরনের সফলতা আশা করে। বাবা-মা তাদের একমাত্র সন্তানের সকল চাহিদা পূরণ করেন, শ্রেষ্ঠ হওয়ার সব রকম সুযোগ তৈরি করে দেন তারা। রিদিতা এখন প্রচণ্ড দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। মা-বাবার স্বপ্ন সে কি পূরণ করতে পারবে? সে কি পারবে সামনের ভর্তি পরীক্ষায় সফলতা আনতে? কিছুই ভালো লাগে না তার। অল্পতেই রেগে যায়, অল্পতেই তার ক্লান্তি আসে। ইদানীং রাতের বেলায়ও ঘুম আসতে চায় না। প্রচণ্ড মাথা ব্যথায় সে ছটফট করে।
উপরের ঘটনাটিতে একটি কিশোরী মেয়ের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কথা বলা হয়েছে। এ ধরনের সমস্যাগুলোর মধ্য দিয়ে কৈশোরের মনোসামাজিক সমস্যার চিত্র ফুটে উঠেছে। তোমরা কি জানো মনোসামাজিক সমস্যা অর্থ কী? এসো আমরা বিস্তারিতভাবে এ সমস্যা সম্পর্কে জেনে নেই ।
বেশির ভাগ কিশোর-কিশোরীরা বড় ধরনের সমস্যা ছাড়াই বয়ঃসন্ধিক্ষণ বয়স পার করে দেয়। কিন্তু কেউ কেউ আছে যারা সাংঘাতিকভাবে তাদের জীবনকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং তাদের সমস্যা তাদের পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী, সহপাঠী সবার জন্যই সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এগুলো পরোক্ষভাবে সমাজের সবাকেই প্রভাবিত করে। এ সমস্যাগুলোই মনোসামাজিক সমস্যা। কৈশোরের মনোসামাজিক সমস্যার মধ্যে পড়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ প্রবণতা, মাদকাসক্তি, বিষণ্ণতা, স্কুল পলায়ন ইত্যাদি। যে ছাত্রটি স্কুল ফাইনাল পরীক্ষার আগেই স্কুল ত্যাগ করে, সে শুধু নিজের ভবিষ্যতই নষ্ট করে না, সমাজের জন্যও সে বোঝা হয়ে দাঁড়ায় ৷
কৈশোরের মনোসামাজিক সমস্যা দুই ধরনের হয়। একটি অন্তর্মুখী ও অপরটি বর্হিমুখী। অন্তর্মুখী সমস্যায় সমস্যাগ্রস্ত ছেলেমেয়েরা নানা ধরনের মানসিক ও আবেগীয় জটিলতায় ভোগে। যেমন- হতাশা, উদ্বেগ ইত্যাদি। বাইরে থেকে এ ধরনের সমস্যার প্রকাশ কম থাকে অর্থাৎ তাদের দেখে হয়তো মনে হবে, সে খুবই স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। কিন্তু ভিতরে ভিতরে সে খুব যন্ত্রণায় ভুগছে। আবেগীয় এসব সমস্যা পরবর্তীতে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার উদ্ভব ঘটায়। যেমন- হতাশা ও বিষণ্ণতা থেকে খাদ্যে অনীহা, ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
বহির্মুখী সমস্যার ক্ষেত্রে সমস্যাগ্রস্ত ছেলেমেয়েদের সমস্যা তার আচরণে প্রকাশ পায়। বহির্মুখী মনোসামাজিক সমস্যা হলো মাদকাসক্তি, বিভিন্ন ধরনের অপরাধ প্রবণতা ইত্যাদি। সাধারণত পারিবারিক বন্ধনের অভাব বা পরিবারের অতিরিক্ত প্রশ্রয় বহির্মুখী সমস্যার উদ্ভব ঘটায়। অপর দিকে মা-বাবার অতিরক্ষণশীলতা অন্তর্মুখী সমস্যার প্রধান কারণ হিসাবে চিহ্নিত। সব কিছুতেই শাসন, সন্তানকে সব সময় চোখে চোখে রাখা অতিরক্ষণশীল মা-বাবার বৈশিষ্ট্য। বহির্মুখী ও অন্তর্মুখী উভয় ধরনের সমস্যা একটির সাথে অন্যটি সম্পর্কিত। যেমন- অনেকে অপরাধপ্রবণ বিষণ্নতায় ভোগে, আবার হতাশাগ্রস্থ কিশোর মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।
কিশোর অপরাধ-
মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হলো কৈশোরকাল। এ সময়ে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন খুব দ্রুত হয়। কৈশোরের একটি ছেলে বা মেয়েকে এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে হয়। কৈশোরকাল প্রাপ্ত বয়সে যাওয়ার সময়কাল। সাধারণত ১১ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত কৈশোরকাল ।
কৈশোরকালে কোনো ছেলে বা মেয়ে আইনবিরোধী কাজে লিপ্ত হলে তাদেরকে কিশোর অপরাধী বলা হয়। বাংলাদেশ শিশু আইন ১৯৭৪ অনুসারে কিশোর অপরাধীর ক্ষেত্রে ছেলেদের ৮ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে এবং মেয়েদের ১৮ বছরের মধ্যে কেউ সমাজবিরোধী কাজ করলে তাকে সংশোধনের জন্য বিশেষ বিচারের সামনে হাজির হতে হয়। কিশোর অপরাধ হলো অপরিণত বয়সে প্রচলিত সমাজব্যবস্থা, আইনকানুনবিরোধী আচরণ। প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য যে ধরনের কাজ শাস্তিযোগ্য অপরাধ, সে ধরনের কাজ ১৬ বছরের নিচে ছেলেরা এবং ১৮ বছরের নিচে মেয়েরা সংঘটিত করলেই তা কিশোর অপরাধ। কিশোর অপরাধ প্রমাণিত হলে শাস্তির ব্যবস্থা থাকে না। তাদের আচরণ সংশোধনের জন্য সংশোধনী কেন্দ্রে রাখা হয়।
বয়স্কদের অপরাধ যেমন পরিকল্পিত থাকে কিশোরদের অপরাধ থাকে অপরিকল্পিত এবং সংখ্যায় অনেক বেশি। কিশোর অপরাধের যে ধরনগুলো আমাদের দেশে বেশি দেখা যায় তা হলো- স্কুল পলায়ন, মেয়েদের প্রতি অশোভন আচরণ, চুরি, ছিনতাই, খুন, ডাকাতি, মারামারি, মাদকদ্রব্য সেবন ইত্যাদি।
মনোস্তাত্ত্বিকেরা কিছুটা ভিন্নভাবে কিশোর অপরাধীদের চিহ্নিত করেন। যেকোনো অগ্রহণযোগ্য কাজ তা আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ না হলেও তা কিশোর অপরাধের মধ্যে পড়ে। যেমন- কারও জিনিস অন্যায়ভাবে নিজের দখলে রাখা, অন্যের সম্পত্তির ক্ষতি করা, অন্যের জীবনের জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা ইত্যাদি। এটা হতে পারে কোনো গাড়িকে ঢিল মেরে পালিয়ে যাওয়া, বিনা কারণে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, শুধু মজা করার জন্য কোনো ক্ষতি করা, যে কোনো ধরনের অন্যায় আচরণ করাই কিশোর অপরাধের মধ্যে পড়ে।
অনেকে বয়ঃসন্ধি বয়সের আগে থেকেই অপরাধমূলক কাজ করে থাকে। তারা সাধারণত ৭/৮ বছর বয়স থেকে ধারাবাহিকভাবে অপরাধ করে। যেমন- মারামারি করা, অন্যের জিনিস নষ্ট করা, চুরি করা ইত্যাদি। এ ধরনের অপরাধের কারণ হিসেবে মানসিক সমস্যা বা বিপর্যয়কে দায়ী করা হয়। কিশোর অপরাধের উপর দীর্ঘদিনের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, যারা ছোট বেলা থেকে অপরাধমূলক কাজে অভ্যস্ত থাকে তারা বড় হয়েও অপরাধমূলক কাজ করে থাকে। তাদের সম্পর্কে গবেষকদের আরও অভিমত -
যারা কৈশোরের আগে থেকে অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত তাদের ছোটবেলা থেকেই কিছু লক্ষণ থাকে। তারা সমবয়সীদের তুলনায় স্কুলে অমনোযোগী থাকে, তাদের বুদ্ধাংক বা আই কিউ কম থাকে, তাদের সমবয়সীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে না। এসব লক্ষণ একটি ছোট শিশুর কিশোর অপরাধী হওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়৷
আরেক ধরনের অপরাধী আছে যারা কিশোর বয়সে এসে অপরাধ জগতে প্রবেশ করে। তারা সমবয়সী দলের চাপে পড়ে অপরাধী হয়। এদের অপরাধ প্রবণতা ততটা গুরুতর হয় না। এরা সমবয়সীদের সাথে দলে অপরাধমূলক কাজ করে ৷
এদের সম্পর্কে গবেষণার ফলাফল হলো—
এর কাজ, কাঠের কাজ, অটো মোবাইলের কাজ ইত্যাদি। এসব প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য থাকে কিশোর ছেলে মেয়েরা তাদের সংশোধনকালীন শেষ হওয়ার পর বাড়িতে ফিরে যেন আত্মনির্ভরশীল হতে পারে, তারা জীবিকার জন্য উপার্জন করতে পারে। প্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালীন তাদের নিয়ম বখাটেদের ইউটিসি প্রতিরোধ কর মেনে চলতে হয়। প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক অপরাধী ছেলেমেয়েদের পর্যবেক্ষণ করে মূল্যায়ন করেন এবং প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে কিছু করণীয় হলো—
কিশোর অপরাধ থেকে মুক্ত থাকার জন্য কিশোরদের নিজেদেরও কিছু করণীয় থাকে। প্রথমত কৈশোরের ছেলে- মেয়েকে তার বন্ধুদলের অপরাধমূলক কাজকে উৎসাহ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, মেলামেশার জন্য ভালো বন্ধুদল নির্বাচন করতে হবে। আইন বা নিয়ম ভঙ্গকারীকে খারাপ বন্ধু হিসেবে চিনে নিতে হবে।
মা-বাবাকে সন্তানের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে যেন সন্তান অপরাধমূলক কোনো কাজে জড়িয়ে পড়ার সুযোগ না পায়। সব সময় অপরাধ জগতের খারাপ দিকগুলো সন্তানের সামনে তুলে ধরতে হবে। তারা যেন এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকে। মা-বাবা ও সন্তানের সম্পর্ক বন্ধুর মতো হলে কৈশোরের সমস্যা অনেক কম হয়।
কাজ ১ – আমাদের দেশে বিদ্যমান কিশোর অপরাধের কারণগুলো কী কী?
কাজ ২ - কিশোর অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে করণীয় বিষয়গুলোর তালিকা কর ।
ভোর রাতে ঘুম ভেঙেছে স্বপ্নার। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিছানায় শুয়ে আছে সে। মায়ের ডাকে বিরক্ত হয়, মেজাজ করে। নবম শ্রেণির ছাত্রী স্বপ্না কিছুদিন হলো স্কুলে যাচ্ছে না। সারা দিন নিজের ঘরে থাকে। বান্ধবীদের খোঁজ নেয় না। কোনো কাজেই আনন্দ পায় না। টেলিভিশনের সিরিয়াল দেখার আগ্রহও তার মধ্যে নেই। স্বপ্নার বৈশিষ্ট্য এমন ছিল না। হাসি-খুশি স্বপ্না বদলে গেছে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা ঘটনায় মন খারাপ হওয়া, কাজ করতে ইচ্ছা না করা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন এ রকম মনের অবস্থা কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে এবং তা শরীরকেও প্রভাবিত করে তখন সেটা দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। বিষণ্ণতা এক ধরনের মানসিক অবস্থা যেখানে মনের অসুখী ও একঘেয়েমির অনুভূতি থাকে। এর ফলে দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজের আগ্রহ থাকে না এবং সে হতাশায় ভুগতে থাকে। খাবারে অনীহা, ঘুমের ব্যাঘাত ইত্যাদি ধরনের শারীরিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে। উল্লিখিত ঘটনায় স্বপ্নার মধ্যে হতাশা ও বিষণ্নতার লক্ষণ স্পষ্ট ধরা পড়ে।
বিষণ্নতা গুরুতর হলে নিচের লক্ষণ দেখা দেয়—
ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের মধ্যে বিষণ্নতা বেশি দেখা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে কৈশোরের বিষণ্নতার সাথে শিশুকালের মানসিক অবস্থার বিশেষ সম্পর্ক আছে। যে ধরনের পরিবারে শৈশবে সন্তান ও মা-বাবার দৃঢ় বন্ধন থাকে না, শিশু প্রতিপালনে স্নেহ আদরের বঞ্চনা থাকে এবং পরিবারের মা বা বাবা যে কোনো একজনের মৃত্যুতে নেতিবাচক মানসিক কাঠামো তৈরি হয়। এসব পরিবারের ছেলেমেয়েদের মধ্যে হতাশা ও বিষণ্নতার
সম্ভাবনা থাকে ।
হতাশা ও বিষণ্নতার কারণ
প্রতিকার-প্রতিরোধ
বিষণ্নতায় ছেলেমেয়েরা নিজেকে খুব একা, অসহায় মনে করে। সামান্য কারণেই তারা কেঁদে ফেলে, তারা কর্ম দক্ষতা হারায় এবং গুরুতর হলে আত্মহননের চিন্তা করে থাকে। এভাবে বিষণ্নতায় অত্যন্ত ভয়াবহ পরিণতির সৃষ্টি হতে পারে। বিষণ্নতা প্রতিরোধ ও প্রতিকারে করণীয় বিষয়গুলো হলো-
কাজ - বিষণ্নতার কারণগুলো উল্লেখ কর। এর পাশাপাশি প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ কর।
দৈনন্দিন জীবনে নানা কারণে আমাদের মন খারাপ হয়। কখনো অন্য কারও কটু কথা বা অপ্রীতিকর আচরণে আমরা মনে কষ্ট পাই। নিজের ইচ্ছা বা চাহিদা পূরণ না হলে আমাদের মন খারাপ হয়। আবার কোনো দুঃসংবাদ বা ঘটনা আমাদের মন কষ্টের কারণ হয়। এই মনের কষ্ট থেকেই সৃষ্টি হয় মানসিক চাপ। মানসিক চাপ এক ধরনের বেদনাদায়ক ও অস্বস্থিকর আবেগীয় অবস্থা, যা আমাদের মনে দ্বন্দ্ব ও হতাশার সৃষ্টি করে। ফলে আমরা অস্থির ও উত্তেজিত হই এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় আমরা মানসিক চাপ অনুভব করি। এই চাপ কখনো তীব্র আবার কখনো মৃদু হয়। মানসিক চাপ ইতিবাচক বা নেতিবাচক হতে পারে।
ইতিবাচক চাপ— দৈনন্দিন জীবনে আমাদের অনেক মানসিক চাপ মোকাবিলা করতে হয়। একে যদি আয়ত্তাধীন রাখা যায় বা নিয়ন্ত্রণ করা যায় তবে এই চাপ অনেক সময় আমাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে ও সাফল্য বয়ে আনে। যেমন— পরীক্ষার সময় যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় তা পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধি করে।
আবার চাকরির ইন্টারভিউ বা নতুন চাকরি, বিভিন্ন কাজ বা অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব আমাদের ইতিবাচক মানসিকচাপ সৃষ্টি করে ।
নেতিবাচক চাপ— মানুষের মনের মধ্যে এমন কিছু চাপ মাঝে মধ্যে দেখা দেয় যা স্নায়ুবিক চাপ সৃষ্টি করে। ফলে মনের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এটাই নেতিবাচক চাপ। এই চাপ আমরা সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমাদের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে বা ছন্দপতন ঘটায় ।
নেতিবাচক চাপ আমাদের নানা শারীরিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। যেমন—
মানসিক চাপ আমাদের জীবনে প্রায়ই দেখা যায়। নিচের দুইটি ঘটনা থেকে তা সহজেই বোঝা যায়।
শিক্ষক লক্ষ করলেন ক্লাসে মিনা মন খারাপ করে বসে আছে। শিক্ষক কারণ জানতে চাইলে মিনা কেঁদে ফেলে। সে জানায় তার ছোট ভাই খুব অসুস্থ। ডাক্তার দেখানো হয়েছে কিন্তু জ্বর ভালো হচ্ছে না। সে তার ভাইকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছে। ফলে সে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে না।
রফিক নবম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা নেই। সংসারে অনেক অভাব। তাই সে পড়াশোনার পাশাপাশি একটি বইয়ের দোকানে কাজ করে। তার পড়াশোনা করার খুব ইচ্ছা। আর্থিক অনটনের কারণে সে সব সময় চিন্তা করে কীভাবে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাবে।
মানসিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতা সবার এক রকম নয়। আবার চাপের প্রতি প্রতিক্রিয়াও সবার এক রকম নয়। চাপের সময় অনেকে ধীরস্থির ও শান্ত থাকে। অনেকে চাপের মুখে অস্থির ও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। মানসিক চাপের সাথে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, বয়স, মানসিক গঠন, সম্মানবোধ ইত্যাদি বিষয়গুলো ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত।
মানসিক চাপের কারণ— নানা কারণে মানসিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে।
মানসিক চাপ থেকে নিজেকে রক্ষার উপায় -
কাজ : কোনো বিষয় বা ঘটনা যদি মানসিক চাপ সৃষ্টি করে তখন তুমি কী করবে।
Read more